রিসার্চ এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু টুলস ও টেকনিক

রিসার্চ

একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (লেকচারার, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ) হবার কারণে শিক্ষকতার পাশাপাশি আমাকে রিসার্চ এর সাথেও যুক্ত থাকতে হয়। গবেষণা জিনিসটা আমাকে বেশ টানে। আমি বড় মাপের কোনো গবেষক নই, আমার মাস্টার্সের থিসিস এবং কয়েকটি গবেষণাপত্র তৈরি করতে গিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেসব জিনিস শিখেছি তা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষুদ্র প্রয়াস এই লেখাটি। আমার বিশ্বাস যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আছেন এবং আমার মতো যাদের গবেষণা ভালো লাগে তাদের জন্য এটি কাজে লাগতে পারে।

প্রথমেই আসি থিসিস (অভিসন্দর্ভ) কিংবা গবেষণাপত্রে গ্রামাটিক্যাল মিসটেকের দিকে। এমনিতে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে লেখার সময়েই প্রাথমিকভাবে গ্রামাটিক্যাল ভুলগুলো ধরা পড়ে। তবে আরো ভালোভাবে ভুল-ত্রুটি মুক্ত করতে দুটি ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন। একটি হলো গ্রামারলি এবং অপরটি প্রো-রাইটিং এইড (Pro-Writing Aid)। গ্রামারলি এবং প্রোরাইটিং এইডের মধ্যে প্রোরাইটিং এইড কিছুটা এডভান্সড, ব্যবহার করতে গেলে হয়তো ভালো বুঝতে পারবেন।

অনেকসময় থিসিসে কিংবা গবেষণাপত্রের জন্য ফ্লোচার্ট, ডায়াগ্রাম, ওয়্যারফ্রেম, সাদামাটা মডেল, ইনফোগ্রাফিক ইত্যাদি তৈরি করতে হয়। এজন্য মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট খুবই কার্যকরী একটি টুল। মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট ব্যবহার করে ইমেজ ফাইল আকারে সংরক্ষণ করা যায়। তবে এর বাইরে একটা চমৎকার একটি সফটওয়্যার হলো ইড্রম্যাক্স (Edrawmax)। পাওয়ারপয়েন্টের মতো এখানে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হয় না। এখানে বিভিন্নরকম ডায়াগ্রাম/চার্ট/ওয়্যারফ্রেম লাইব্রেরি আছে যার থেকে প্রয়োজনীয় অংশটি বের করে এডিট করে নেওয়া যায়।

যারাই গবেষণার সাথে জড়িত তারা অবধারিতভাবেই গুগল স্কলারের সাথে পরিচিত। যেকোনো থিসিস বা গবেষণাপত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো রেফারেন্সিং বা সহজভাবে বললে পেপার সাইট করা বা কোনো গবেষণাকর্মের উল্লেখ করা। পেপার সাইট করার অনেক পদ্ধতি আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় চারটা ফরম্যাটে সাইট করতে পারা যায় গুগল স্কলার থেকেই। নিজের গবেষণার বিষয়ে নতুন কী কাজ হচ্ছে বা আগে কী কী কাজ হয়েছে সেটা জানার সবচেয়ে ভালো ওয়েবসাইটও এটিই।

এই ওয়েবসাইটের অ্যাডভান্সড সার্চ নামের একটি অপশন আছে, যেটা ব্যবহার করে দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় গবেষণাপত্রগুলোর ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা লাভ করা যায়। ইউটিউবে অ্যাডভান্সড সার্চ ইন গুগল স্কলার লিখে সার্চ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবার কথা।

তবে থিসিসের রেফারেন্স ম্যানেজমেন্টের জন্য দুইটি খুব কার্যকরী সফটওয়্যার হলো মেণ্ডেলে (Mendeley) ও জোটেরো (Zotero)।

যারা নবীন গবেষক তারা অবশ্যই নিজ গবেষণাপত্র কোনো জার্নালে সাবমিট করার পূর্বে জার্নালটি প্রিডেটরি জার্নাল কিনা সেটা চেক করে নিতে হবে। প্রিডেটরি জার্নাল হলো সেসব জার্নাল যেখানে কোনো বিশেষজ্ঞ মতামত বা পিয়ার রিভিউ ছাড়াই বা নামমাত্র রিভিউ করে টাকার বিনিময়ে ১০-১৫ দিন বা তারও কম সময়ে পেপার পাবলিশ করা হয়। এসব জার্নাল অনেক বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নতুন গবেষকদের জন্য এটা যাচাই করা মাঝেমধ্যে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য কোনো জার্নালে সাবমিট করার আগে জার্নালটি কোথায় কোথায় ইন্ডেক্সড সেটা দেখা প্রয়োজন। এর জন্য জার্নালের ইন্ডেক্সড ইন অংশে যেতে হবে। ওয়েব অব সায়েন্স এবং স্কোপাসে ইন্ডেক্সড হওয়া সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুটি মানদণ্ড। তবে বলে রাখা ভালো যে এই দুইটার বাইরেও বেশ কিছু জার্নাল আছে যেখানে পিয়ার রিভিউ হয় এবং তারা প্রিডেটরি জার্নাল নয়। তবে খুব সহজে কোনো জার্নাল প্রিডেটরি কিনা সেটা জানার একটা ওয়েবসাইট আছে- https://beallslist.net

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে নির্ভরযোগ্য জার্নালে গবেষণাপত্র দেয়ার উপায় কী?

প্রত্যেকটা জার্নাল কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের গবেষণাপত্র গ্রহণ করে। এজন্য জার্নালের Aim & Scope অংশটি ভালোভাবে পড়তে হবে। এর বাইরে যেটা করা যেতে পারে, জার্নাল সাজেস্টার বা আপনার গবেষণাপত্রটি কোন জার্নালের জন্য প্রযোজ্য সেটা জানার কিছু ওয়েবসাইট ব্যবহার করা। বড় বড় পাবলিশিং হাউজ যেমন এলসেভিয়ার, স্প্রিঞ্জার, আইট্রিপলই এদের নিজস্ব জার্নাল সাজেস্টার আছে। এদের ওয়েবসাইটে গেলেই আপনার পেপারটা তাদের কোন জার্নালের জন্য উপযুক্ত সেটি জানিয়ে দেবে। এর বাইরে কার্যকরী দুটি ওয়েবসাইট হলো জার্নাল গাইড (Journal Guide) এবং ওয়েব অব সায়েন্স ম্যানুস্ক্রিপ্ট ম্যাচ (Web of Science Match Manuscript)

এছাড়াও আপনি আপনার গবেষণাপত্রের বিষয়ের উপর জার্নালগুলোর তালিকা দেখে তাদের মান যাচাই করে পেপার সাবমিট করতে পারেন। এজন্য ব্যাবহার করতে পারেন নিচের তিনটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটগুলোতে গিয়ে আপনার গবেষণাপত্রের বিষয় লিখে সার্চ করবেন যেমন আমি ফিজিক্সের আমি লিখি ‘Physics & Astronomy’ বা কেউ যদি ন্যানোটেকনোলজির হয় সে লিখবে ‘Nanotechnology’।

স্কোপাস ইন্ডেক্সড জার্নাল (Scopus Indexed Journals)

ওয়েব অব সায়েন্স মাস্টার জার্নাল লিস্ট (Web of Science Master Journal List)

সিমাগো জার্নাল এন্ড কান্ট্রি র‍্যাংক (Scimago Journal and Country Rank)

Start Your Research Now

Related Articles

𝗘𝗿𝗮𝘀𝗺𝘂𝘀 𝗠𝘂𝗻𝗱𝘂𝘀 𝗦𝗰𝗵𝗼𝗹𝗮𝗿𝘀𝗵𝗶𝗽(ইরাস্মাস মুন্ডাস স্কলারশিপ)

ইরাস্মাস মুন্ডাস স্কলারশিপ ইউরোপের বিখ্যাত একটি স্কলারশিপ। মূলত মাস্টার্সে অধ্যয়নের জন্য এই স্কলারশিপটি প্রদান করা হয়। এটি ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ অর্থাৎ এটি আপনার টিউশন ফি…

রিসার্চবাডি এআইঃ গ্লোবাল রিসার্চ কোলাবোরেশন প্লাটফর্ম

রিসার্চবাডি এখন গবেষণা জগতে এক গেম-চেঞ্জার। বাংলাদেশি রিসার্চারদের জন্য তৈরি এই প্ল্যাটফর্মটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে একজন গবেষক বা সুপারভাইজার তার প্রোফাইল তৈরি করে…

Responses

Your email address will not be published. Required fields are marked *